#কোষ্ঠকাঠিন্য#
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি খুবই সাধারণ সমস্যা, তবে অবশ্যই বিরক্তিকর ও কষ্টকর। এমন কোনও ব্যক্তি নেই, যার জীবনে কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য হয়নি। ভুক্তভোগীর মূল সমস্যাই হলো খুব শক্ত পায়খানা, টয়লেটে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করেও পরিষ্কার না হওয়া বা অসম্পূর্ণ হওয়ায় অনেকেই অস্বস্তিতে ভোগেন। এমনকি এর ভয়ে বিভিন্ন ধরণের খাওয়া দাওয়া করতেও ভয় পান। তবে দীর্ঘ মেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্যকে কোনক্রমেই অবহেলা করা যাবে না। কারণ এটিই হতে পারে জটিল কোন রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
#কোষ্ঠকাঠিন্য কী:
পায়খানা শক্ত বোঝাতে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটি ব্যবহার করি। মেডিকেল সাইন্সের পরিভাষায় পায়খানা সপ্তাহে তিন বারের কম অথবা পরিমাণে কম, শক্ত বা শুকনা হওয়া, বেশি সময় ধরে চেষ্টা করার পরও মলত্যাগ না হওয়াকেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। কেউ পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরও যদি সপ্তাহে তিন বারের কম মলত্যাগ করেন তখন একে কোষ্ঠকাঠিন্য বিবেচনা করে সঠিক কারণ নির্ণয় জরুরি।
#লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ:
কোষ্ঠকাঠিন্যর মূল উপসর্গটিই হলো শক্ত ও কঠিন মল। এর সাথে নিম্নে উল্লেখিত এক বা একাধিক উপসর্গও থাকতে পারে।
- মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা, তারপরও অসম্পূর্ণ মনে হওয়া
- অনেক বেশি চাপের প্রয়োজন হওয়া, তারপরও অনেকের ভাষায় পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়।
-মলদ্ব্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা, প্রায়ই আঙ্গুল দিয়ে সাপোজিটিরি বা অন্য কোনো মাধ্যমে মল বের করার চেষ্টা করা।
#কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ:
নানা কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতেই পারে। অনেকের এমনিতে কোন রোগ ছাড়াই কোষ্ঠকাটিন্য হয়, আবার বেশ কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কিছু কিছু কারণ জীবন যাপনের পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্ট, আর কিছু কিছু হয়ে থাকে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে। শারীরিক গঠনের পাশাপাশি কিছু খারাপ অভ্যাস এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেতে যান্ত্রিক জীবনযাত্রা এর জন্য দায়ী। কোষ্ঠকাঠিন্য যে কোন বয়সেই হতে পারে। তবে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশি হয়।
#জীবন যাপনের পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্ট কারণগুলো হচ্ছে-
- অসম খাদ্যাভ্যাস যেমন আঁশযুক্ত খাবার ও শাক সবজি কম খাওয়া।
- নিয়মিত ফাস্টফুট খাওয়া এবং পরিমাণে বেশি খাওয়া।
-পানি বা তরল খাবার কম খাওয়া।
- সময় মত মলত্যাগ না করে চেপে রাখার প্রবণতা।
-আমাদের দেশের বেশিরভাগ কর্মজীবী মহিলাদের এই অভ্যাসটা আছে। কর্মস্থলের টয়লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত প্রাইভেসি না থাকায় তারা সাধারণত কর্মস্থলে টয়লেট ব্যবহার করেন না।
- অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের মধ্যে থাকা।
- শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম কম করা।
-দুর্ঘটনা, কোনো কোন অপারেশনের পরে বা কোনো রোগের কারণে দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ী থাকা।
- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি স্বাভাবিক সমস্যা।
- শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া কৌটার দুধ খাওয়ালে এবং বয়স অনুযায়ী অন্যান্য খাবার না খাওয়ালে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
##রোগের সাথে সংশ্লিষ্ট কারণগুলো হচ্ছে-
- কলেরেকটাল তথা মলাশয়ের ক্যান্সার
- মলদ্ব্বারে ফিশার, পেরিএনাল এবসেস ইত্যাদি রোগে মলদ্ব্বারে বেশি ব্যথা হয়, ফলে ভয়ে পায়খানা না করলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- হাইপোথাইরয়ডিজম, হাইপার প্যারাথাইরয়ডিজমের মত হরমোন ঘঠিত রোগ, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি।
- পার্কিনসন’স ডিজিজ, আই বি এস।
##বিভিন্ন ধরণের ওষুধ সেবন করার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায়ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
যেমন-
- রক্তশূন্যতায় আয়রণ জাতীয় ওষুধ খেলে।
- ক্যালসিয়াম, এলুমিনিয়াম ও ক্যালসিয়াম যুক্ত এন্টাসিড।
- আফিম, মরফিন জাতীয় নার্কোটিক ওষুধ।
- মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।
#কোষ্ঠকাঠিন্যের জটিলতা:
দীর্ঘ দিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে শরীরে, বিশেষ করে মলদ্ব্বারে অনেক ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-
- মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া, রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্ব্বার বাইরে বের হয়ে আসা।
- অর্শ বা পাইলস, ফিস্টুলা বা ভগন্দর, এনাল ফিশার বা গেজ রোগ হওয়া।
- প্রস্রাবের সমস্যা।
- ইন্টেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন বা অন্ত্রে ব্লক বা প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যাওয়া, পেটে ব্যথা।
- অরুচি, বমিভাব বা বমি হওয়া, অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া, অনেক দিন ঠিকমতো খেতে না পারার কারণে ওজন কমে যাওয়া, রক্তশূন্যতা হওয়া ইত্যাদি।
#চিকিত্সা :
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা। প্রাথমিকভাবে এর চিকিত্সা হচ্ছে-
- প্রচুর পানি, শরবত বা তরল খাবার গ্রহন করা, বেশি করে শাক সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম এবং হাটাচলা করা।
- ইসবগুলের ভুষি, বেল, পেঁপে ইত্যাদি নিয়মিত খাওয়া। -সোনাপাতা, এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
- হালকা গরম দুধ পান করা।
- এতে উপকার না হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পায়খানা নরম হওয়ার ওষুধ, যেমন ল্যাক্সেটিভ ব্যবহার করতে হবে।
++মনে রাখতে হবে, কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকেই কারণ শনাক্ত না করে বা উপরোক্ত প্রাথমিক ব্যবস্থাগুলো না নিয়েই প্রথম থেকে মল নরম করার বিভিন্ন ধরণের ওষুধ এবং মলদ্ব্বারের ভেতরে দেওয়ার ওষুধ প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে থাকেন যা মোটেও উচিত নয়।
++নিয়মিত এসব ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। এর ফলে মলদ্ব্বারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা আর থাকে না।
++তাই কোষ্ঠকাঠিন্যের সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিত্সা নেয়া উচিত।
++একথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মলত্যাগের সময় মলের সাথে তাজা রক্ত গেলে, মলদ্ব্বারে ব্যথা হলে, চিকন মল বের হলে দেরি না করা ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
++গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য হলে দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
###কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করার উপায়:###
কথায় আছে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করার জন্য কিছু টিপস:
- খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্যের প্রতি জোর দিতে হবে, যাতে প্রচুর শাক সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার থাকে। ফলমূল, সিরিয়াল জাতীয় খাদ্য খাওয়া ভালো।
- ফাস্টফোড যথা সম্ভব কম খাওয়া। অতিরিক্ত চা, কফি পরিহার করা।
- বেশি করে পানি বা অন্য যে কোন তরল খাদ্য পান করা।
- দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপমুক্ত জীবন যাপনের চেষ্টা করা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা বা যে কোনো ধরণের শারীরিক পরিশ্রম করা।
- যতটুকু সম্ভব, পায়খানা চেপে না রাখার অভ্যাস করা।
- দীর্ঘ মেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
::কোষ্ঠকাঠিন্য হলেই যে জটিল কোন রোগ আছে এটা যেমন সঠিক নয়, তেমনি একেবারে অবহেলা করাও উচিত নয়।
::বিশেষ করে অনেকেই মনে করেন, মেয়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য স্বাভাবিক। এটা ভেবে অবহেলা করাও ঠিক নয়।
::কোষ্ঠকাঠিন্য জটিল রোগ না হলেও, কোন কোন রোগের পূর্বাভাসও হতে পারে। যেমন মলাশয়ের ক্যান্সার। তাই কোন অবহেলা নয়, বিশেষ করে হঠাত্ কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
: :একটু সচেতনতা এবং জীবন-যাপন পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনলেই সুস্থভাবে থাকা সম্ভব
@@কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা যে ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন:
* দুধ:
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (যেমন: পনির, আইসক্রিম ইত্যাদি) কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে অনেকের। এ ধরনের খাবারে আঁশের পরিমাণ কম। ছোট শিশু যারা শুধু কৌটার দুধ খায়, তাদের এ সমস্যা বেশি। তবে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় দুধ থাকা উচিত। টক দই হজমে সহায়ক।
* মাংস:
লাল মাংসে (গরু ও খাসির) চর্বি বেশি থাকে। এটা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। এই খাবার অন্ত্রে অনেকক্ষণ থাকে। মাংসের সঙ্গে পাতে যেন প্রচুর সবজি ও সালাদ থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* চিপস:
স্ন্যাকস বা নাশতা হিসেবে পটেটো চিপসজাতীয় খাবার ভালো নয়। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দেবে।
* হিমায়িত খাবার:
সংরক্ষিত বা প্রক্রিয়াজাত খাবারে পানি শুকিয়ে ফেলা হয় ও লবণ বেশি থাকে। ফলে এ ধরনের খাবারে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়বে।
* বেকারি পণ্য:
বেকারি পণ্য যেমনবিস্কুট, ক্র্যাকার্স, ডোনাট, পেস্ট্রিজাতীয় খাবারে চর্বি বেশি, জলীয় অংশ কম, আঁশও কম। এর ফলে যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তাঁদের জন্য এগুলো বর্জনীয়। ফল খাওয়াটা তাঁদের জন্য ভালো।
* কাঁচকলা:
কাঁচকলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, এটা ঠিক। তবে পাকা কলায় যথেষ্ট আঁশ আছে। তাই ওটা খাওয়া যাবে।
* ভাজাপোড়া:
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, বিস্কুটের গুঁড়া ও ব্রেড ক্রাম্বে ভাজা যত খাবার আছে, সেগুলো অন্ত্রের চলন কমিয়ে দেয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ায়।
#কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে কিছু খাবার:
কলা:
কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া কলা পটাশিয়াম বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে কলার অবদান অপরিসিম।
কফি:
কফি একটি জনপ্রিয় পানীয়। এটা আজকাল সবাই খেয়ে থাকে। যখন শরীর থেকে ঘুমের ভাব কাটানোর দরকার হয় তখন বেশিরভাগ মানুষ কফি পান করেন, কিন্তু এটা অন্যান্য কারণেও উপকারি। কারো কারো ক্ষেত্রে এই কফি পেট নরম করতে সাহায্য করে থাকে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গিয়ে অতিরিক্ত কফি পান করে বসবেন না যেন, এতে ডায়রিয়া হয়ে যেতে পারে। ২-৩ কাপের বেশি পান না করাই ভালো।
পানি :
এটা তো বলার প্রয়োজন নেই পানি আমাদের দেহের জন্য কতটা উপকার। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শরীর যথেষ্ট পানি না পাওয়ার কারণে তৈরি হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। এ কারণে যথেষ্ট পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে আপনি যখন ব্যায়াম করবেন বা বাইরে অনেকটা সময় গরমে কাটাবেন, তখন পানি বিশেষভাবে জরুরী।
কমলা :
উচ্চমাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ কমলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে একটি বা দুটি কমলা খাওয়া অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করবে। জুস নয়। বরং আস্ত কমলা ফলটাকেই খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে যে ফাইবার থাকে। তা আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করবে শুধু তা নয় সাথে পুরাপুরি সারাতেও সম্ভাব করবে। এটা ২০০৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে কমলায় থাকা নারিনজেনিন নামের একটি উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক সহায়ক।
পপকর্ন :
অনেকে পপকর্ন খাবার এতটা নাও পছন্দ করতে পারে। কিন্তু পপকর্ন যে কতটা স্বাস্থ্যকর খাবার তা আমাদের জানা প্রয়োজন। আর পপকর্নে যে ফাইবার থাকে তার কারনে খাদ্য তালিকায় পপকর্ন রাখা উচিত। এই ফাইবারের কারণে আপনার দেহের অনেক সাহায্য করতে পারে। তবে সাবধান, মাখনে ভরা ফ্যাটি পপকর্ন খাবেন না। দরকার হলে বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন একদম সাধারণ পপকর্ন। পপকর্নে থাকা ফাইবার উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক উপকারি।
লাল চাল :
যদিও আমাদের সাদা চাল খাওয়ার অভ্যাস কিন্তু প্রতি কাপ লাল চালে থাকে ৩.৫ গ্রাম ফাইবার। এ ছাড়াও এটি সাধারণ সাদা চালের চাইতে বেশি পুষ্টিকর। আরো খেতে পারেন বিভিন্ন হোল গ্রেইন। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে লাল চালের ভূমিকা অনেক বেশি।
পালং শাক:
সবজি হিসেবে পালং আমাদের অনেক পছন্দের। এক কাপ সেদ্ধ পালং শাকেই থাকে চার গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও থাকে ১৫০ মিলিগ্রামের বেশি ম্যাগনেসিয়াম, যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পালং শাকের ভূমিকা অপরিসীম।
টকদই:
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে টকদইয়ের তো তুলনায় নেই। টকদইয়ের প্রোবায়োটিক গুণাগুণ আপনার হজমের সমস্যাকে দূর করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। এমনকি নিয়মিত টকদই খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা থাকবেই না।
ইসুপগুলের ভুষি :
ইসুপগুলের ভুষি পানির সাথে মিশিয়ে খেলে যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান হয় এটা প্রায় সবাই জানেন। তবে খেতে হবে নিয়ম মতো। অনেকেই ইসুপগুলের ভুষি পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এবং পরে খান। এতে আসলে উপকার হয় না। বরং পানিতে দিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে ফেলতে হবে। আবার অনেক ইসবগুল বা ভূসি ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে চিনি বা গুড়সহ নিয়মিত খালি পেটে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এই কথাও বলে থাকে গ্রামে-গঞ্জে দীর্ঘকাল ধরে। একথা সত্যি ইসুপগুলের ভুষি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক উপকার।
আপেল :
আপেলের গুনাগুন তো আমরা কমবেশি জানি। আপেলের খোসার মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার যা খাবার হজমের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী। এছাড়াও আপেলের প্যাক্টিন নিশ্চিত করে পরিপাকতন্ত্রের সঠিক কর্মক্ষমতা। সবচাইতে ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন খালি পেটে অন্তত ১ টি আপেল খেতে হবে। সুতরাং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপেলের উপকারিতা অনেক।
গাজর :
গাজর একটি সুস্বাদু সবজি। এই সবজিটি কাঁচাও খাওয়া যায় এবং রান্না করেও খাওয়া যায়। এই অত্যন্ত সুস্বাদু সবজিটি প্রক্রিতিক ডায়াটেরি ফাইবারের বেশ ভালো উৎস। মাত্র আধা ইঞ্চির ৭ খণ্ড গাজরে রয়েছে প্রায় ১.২ গ্রাম ফাইবার। প্রতিদিন গাজর খাওয়ার অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে দূরে রাখবে চিরকাল। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গাজর খাওয়ার অভ্যাস করার দরকার।
শসা :
শসার বেশীরভাগ অংশই পানি দিয়ে তৈরি, আর শসার ডায়াটেরি ফাইবার শসাকে করে তোলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার মহৌষধ। দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করতে সক্ষম নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস থেকে।
কাঠবাদামের তেল :
কাঠবাদামের তেল কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। কাঠবাদামের ল্যাক্সাটিভ ইফেক্ট হজম ত্বরান্বিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন রাতে ১ গ্লাস দুধে ২ টেবিল চামচ কাঠবাদামের তেল মিশিয়ে পান করলে সমস্যার দ্রুত সমাধান পাওয়া সম্ভব।
পাকা বরই :
আবার অনেকে পাকা বরই কে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। এই মিষ্টি পাকা বরই চটকে খোসা ও বীজ ফেলে অথবা ছেঁকে অল্প পানি মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম হয়।
বেলের সরবত :
বেলের সরবতও অনেক উপকারী। ৩০-৩৫ গ্রাম পাকা বেলের শাঁস প্রতিবারে ১ গ্লাস পানিতে শরবত তৈরী করে দিনে ২ বার সেবন করতে হবে। এভাবে কমপক্ষে ৫-১০ দিন বেলের সরবত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে।
বুচকি দানা :
বুচকি দানাও উপকারী। ২ গ্রাম পাতা চূর্ণ রাতে ঘুমানোর সময় গরম পানি অথবা দুধসহ সেবন করতে হবে। খারাপ লাগলে দই খেতে হবে।
#ঘরোয়া উপায় কোষ্ঠকাঠিন্য বেশ অস্বস্তিকর একটি সমস্যা। পেট ফোলাভাব, বমি বমি ভাব, বাথরুম করতে অসুবিধা ইত্যাদি সমস্যা হয় এ সময়।
সমস্যা হলে তো চিকিৎসকের কাছে যাবেনই, তবে ঘরে তৈরি একটি পানীয় খেয়ে দেখতে পারেন।
::কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে এই পানীয়। জেনে নিন ৩টি আয়ুর্বেদিক উপায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অব্যর্থ।
:এই পানীয় তৈরি করতে লাগবে তিনটি উপাদান অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, মধু ও পানি।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে অ্যাসিটোব্যাকটার নামের একটি ভালো ব্যাকটেরিয়া।
-এটি খাবারকে ভাঙতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমতে সহায়ক হয়।
-এর জন্য কাঁচা ও অপরিশোধিত অ্যাপেল সিডার ভিনেগার প্রয়োজন।
- কাঁচা মধুর মধ্যে থাকা উপাদান ইউজেনল কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কাজ করে।
#এই পানীয় বানানোর জন্য এক গ্লাস গরম পানি নিতে হবে।
এর মধ্যে দুই টেবিল চামচ কাঁচা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে।
এর মধ্যে দুই টেবিল চামচ কাঁচা মধু দিতে হবে। একে ভালো নাড়তে হবে। মধুকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে সকালে বা দিনের যেকোনো সময় এটি পান করতে হবে।
#প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে একটি খোসাসহ পুরো আপেল খাবেন।
#রাতে ঘুমাতে যাবার আগে এক কাপ কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। এটা হজমে সহায়তা করবে এবং কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করবে।
#সারা রাত বড় ১টি সাদা এলাচ এক কাপ গরম দুধে ভিজিয়ে রাখতে হবে । সকালবেলা এই এলাচটি থেঁতো করে দুধসহ খেতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাটি যদি ভয়াবহ রকমের বেশি হয় তাহলে সকাল ও রাতে একইভাবে দুধসহ এলাচ খেতে হবে।
#কিসমিস ও গরম দুধ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কিসমিস ও গরম দুধের অনেক উপকার। ১০/১২টি কিসমিস নিয়ে তার মধ্যে বিচি থাকলে ছাড়িয়ে ফেলতে হবে। এরপর ১গ্লাস দুধে কিসমিস দিয়ে ১চিমটি দারুচিনির গুড়া ভালভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এভাবে টানা ৩দিন দুধ পান করতে হবে। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
#ত্রিফলা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ত্রিফলা কার্যকরী। ত্রিফলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়া এটি হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ও বদহজম জনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ১চা চামচ ত্রিফলা পাউডার ১গ্লাস গরম পানিতে বা গরম দুধে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে তা নিয়মিত পান করতে হবে। এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
#তিলবীজ
তিল বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রে অনেক উপকার করে থাকে। তিল বীজ গুড়া করে আটা বা ময়দার সাথে মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খেতে পারেন। এতে করে দেহে ফাইবারের অভাব পূরণ হবে। সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে।
0 Comments