#চিনি
#দ্বিতীয় পর্ব
চিনিকে সাধারণত ১১ ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো :
১. দানাদার চিনি
একে টেবল সুগার বা হোয়াইট সুগার (সাদা চিনি) বলা হয়। এগুলো উচ্চমাত্রায় রিফাইন বা পরিশোধন করা থাকে। এগুলো সাধারণত পাওয়া যায় আখ, সুগার বিট ইত্যাদি থেকে। এ ধরনের চিনি ঘরোয়া রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত হয়।
২. সাসটার সুগার
এটাও দানাদার রিফাইন বা পরিশোধিত চিনি। এটা হোয়াইট সুগারের তুলনায় বেশি পরিশোধিত থাকে। এ ধরনের চিনি সিরাপ আর ড্রিংক ককটেলে ব্যবহৃত হয়।
৩. কনফেকশনারস সুগার
এটা গুঁড়ো চিনি। এটাকে টেন পারসেন্ট সুগারও বলা হয়। এটা বেক পণ্য ডেকোরেশনে (সজ্জায়), বরফ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আইস কিউব, ললির ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়।
৪. পার্ল সুগার
এটা অন্যান্য চিনির থেকে একটু শক্ত হয়। একটু ক্রিমি রঙের হয়। এটা উচ্চ তাপেও সহনশীল, গলে না। এটা প্রেসটি, কুকিজ, বাটার বান ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
৫. স্যানডিং সুগার
এটাও তাপ সহনশীল। অন্যান্য চিনি থেকে দানাটা একটু বড়। কিছু কিছু বিস্কুটের ওপরে নতুন মাত্রা দিতে এবং মচমচে করার ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়।
৬. কেইর (আখ) সুগার
এই চিনি আখ থেকে তৈরি হয়। এটা কম প্রক্রিয়াজাত চিনি। এই চিনি সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের। এটা শরীর সহজে শোষণ করতে পারে।
৭. ডিমেরারা সুগার
এটাও কম প্রক্রিয়াজাত। এর দানাও বড়। গন্ধটা অন্য চিনি থেকে একটু ভিন্ন থাকে। দোকানের চা, কফি এগুলোকে মিষ্টি স্বাদের করতে সাধারণত এগুলো ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কেক, কুকিজে ব্যবহার করা হয়।
৮. টারবিনেডো সুগার
এই চিনিও আখ থেকে পাওয়া যায়। বড় দানাদার এবং হালকা খয়েরি বর্ণের হয়। এই চিনি ক্যারামেল ফ্লেভারের হয়। এটা কোমলপানীয় শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
৯. মাসকোভাডো সুগার
এটা অপ্রক্রিয়াজাত আখের চিনি। এখান থেকে মলাসেসকে (খাদ্য উপাদান) আলাদা করা হয় না। এটা গাঢ় অথবা হালকা দুটো বর্ণের হয়। একটু ভেজা ভেজা এবং আঠালো হয়। কড়া গন্ধের হয়। বালুর মতো হয়। বার-বি-কিউ বা মেরিনেট সুগারে এটা ব্যবহার করা হয়।
১০. লাইট ব্রাউন সুগার
এটা পরিশোধিত হোয়াইট সুগারের মধ্যে সামান্য পরিমাণ মলাসেস যোগ করা হয়। এটা ভেজা ভেজা এবং বালুর মতো হয়। ক্যারামেল ফ্লেভারের হয়।
১১. ডার্ক ব্রাউন সুগার
এটার গন্ধও অনেক কড়া থাকে। এটা এক ধরনের পরিশোধিত হোয়াইট সুগার। এর মধ্যে বেশি পরিমাণে মলাসেস যুক্ত থাকে।
মিষ্টি জাতীয় নানা খাবার প্রস্তুত করতে চিনির বহুল ব্যবহার আমাদের সবার জানা। শরীরে শর্করার চহিদা মেটানোর উপকরণ হিসেবেও বেশ পরিচিত। কিন্তু খাবার প্রস্তুত ছাড়াও চিনির রয়েছে উপকারী বহু গুণ। ব্যবহার জানা থাকলে নিজেই পেতে পারেন এসব উপকার। আসুন আজ জেনে নেব, চিনির ভিন্ন ব্যবহারে অসাধারণ উপকার সম্পর্কে।
#চিনি খাওয়ার #উপকারিতা:
চিনির রয়েছে অনেক উপকারিতা। চিনির বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
#দ্রুত শক্তি দেয়:
যখন শরীরে চিনির ঘাটতি হয়, তখন শক্তি কমে যায়। আর চিনি খেলে শরীর তাৎক্ষণিক শক্তি পায়।
#ত্বকের টোন ঠিক রাখে:
এর মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোলিক এসিড, যা ত্বকের টোনকে ঠিক রাখে। ত্বকের তৈলাক্ততার ভারসাম্য রক্ষা করে, দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
#নিম্ন রক্তচাপ:
চিনি নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। নিম্ন রক্তচাপ হলে চিনির শরবত বা চিনি খাওয়া যেতে পারে। যারা লো ব্লাড প্রেসারে ভোগেন তাদের সবসময় সঙ্গে চিনি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
#কাটাছেঁড়া:
চিনির দানা যেকোনো কাটাছেঁড়া ক্ষেত্রে প্রলেপ হিসেবে লাগালে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে।
#বিষণ্ণতা দূর করে:
চিনি বিষণ্ণতা দূর করতেও সাহায্য করে।
চিনির ব্যবহার:
চিনি খাওয়ার ক্ষেত্রেই শুধু উপকারিতা আছে তা নয়, চিনির রয়েছে নানাবিধ ব্যাবহারও। এবার চিনির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হল।
#ত্বকের মরা কোষ দূর:
ত্বকের মরা কোষ দূর করতে প্রাকৃতিক স্ক্রাব খুবই উপকারী। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য চিনি ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল ও নরম হবে এবং ত্বকের মরা কোষ দূর হবে।
#হাতের গন্ধ তাড়ায়:
খাওয়ার পর হাতে খাবারের গন্ধ শুধু সাবানে দূর হয় না। এ সমস্যার সমাধানে চিনি ব্যবহার করতে পারেন। লিকুইড সাবান, চিনি ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে গন্ধ যাওয়ার পাশাপাশি হাতের ত্বক নরম ও মসৃণ হবে।
#ফুল তাজা রাখে:
শকর্রাসমৃদ্ধ চিনি শুধু মানুষের শরীরের পুষ্টি জোগায় না, এটি ফুলকেও জীবন্ত রাখতে সাহায্য করে। একটি বোতলে তিন টেবিল চামচ চিনি এবং দুই টেবিল চামচ ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এর পর ফুলের ওপর ছিটিয়ে দিন। চিনি ফুলকে সতেজ রাখবে এবং ভিনেগার ফুলের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করবে।
#ব্লেন্ডারের দাগ দূর:
কফি মেকার, জুস মেকারের যেকোনো দাগ দূর করতে চিনি বেশ কার্যকর। এক কাপ চিনি ব্লেন্ডারে নিয়ে পানি ছাড়া ব্লেন্ড করুন। এর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, সব দাগ দূর হয়ে যাবে। এটি খুব সহজে চায়ের ফ্লাক্সেরও দাগ দূর করে। এক চামচ চিনি দিয়ে ফ্লাক্সের মুখ ভালো করে বন্ধ করে রাখুন। কয়েক ঘণ্টা পর ভালো করে ঝাঁকিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক নিমেষেই আপনার চায়ের ফ্লাক্সের দাগ দূর হয়ে যাবে।
#বিস্কুট মচমচে রাখে:
বয়ামে বিস্কুট রেখে এর মধ্যে চিনির কিউব দিয়ে বয়ামের মুখ ভালো করে বন্ধ করুন। এতে বিস্কুট মচমচে থাকবে। এভাবে আপনি রুটি, কেক, এমনকি চিজও রাখতে পারেন।
#কাপড়ের দাগ দূর:
অনেক সময় কাপড়ে লেগে থাকা কালির দাগ উঠতে চায় না। এ ক্ষেত্রে গরম পানির মধ্যে চিনি মিশিয়ে দাগের ওপর মেখে এক ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, কাপড়ের দাগ দূর হয়ে যাবে।
#কালির দাগ দূর:
অনেক সময় গাড়ি নানা কাজে হাতে কালির দাগ লেগে যায়। এই কালির দাগ সহজে যেতে চায় না। হ্যান্ডওয়াশের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ভালো করে ঘষে হাত ধুয়ে ফেলুন। এক নিমেষেই হাতের কালির দাগ দূর হয়ে যাবে।
0 Comments